বিবিসি বাংলা: তারেক
রহমান আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিবিসি বাংলার সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য।
তারেক রহমান: আপনাদেরকেও
অনেক ধন্যবাদ, আমাকে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
বিবিসি বাংলা: আপনি কেমন
আছেন? আপনার সময় কেমন যাচ্ছে?
তারেক রহমান:
আলহামদুলিল্লাহ আমি শারীরিকভাবে ভালো আছি। সময় তো স্বাভাবিকভাবে ব্যস্তই যাচ্ছে।
ফিজিক্যালি হয়তো আমি এই দেশে আছি, বাট মন মানসিকতা সবকিছু মিলিয়ে তো আমি গত ১৭
বছর ধরে বাংলাদেশেই রয়ে গিয়েছি।
বিবিসি বাংলা: আমরা এমন
একটা সময় আপনার সঙ্গে কথা বলছি যখন বাংলাদেশ ইতিহাসে একটা গুরুত্বপূর্ণ
সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে বললে ভুল বলা হবে না। ২০২৪ সালে একটি ঐতিহাসিক
গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনের অবসান হয়েছে।
আর কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ একটি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে
আপনি আপনার অনেক দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন, কথা বলেছেন, নিয়মিতই কথা বলে
যাচ্ছেন। কিন্তু গণমাধ্যমের সঙ্গে আপনি এই দীর্ঘ সময় কথা বলেননি। এতদিন ধরে আপনি
কথা বলেননি কেন?
তারেক রহমান: ব্যাপারটা
বোধহয় এরকম না, ব্যাপারটা বোধয় একটু ভিন্ন। আসলে আমি কথা ঠিকই বলেছি। আমি দীর্ঘ
১৭ বছর এখানে আছি এই দেশে, প্রবাস জীবনে, তবে আমার উপরে যখন দলের দায়িত্ব এসে
পড়েছে তারপর থেকে আমি গ্রামে-গঞ্জে আমার নেতাকর্মীসহ তাদের সঙ্গে বিভিন্ন
পর্যায়ে সাধারণ মানুষ যখন যেভাবে অংশগ্রহণ করেছে আমি সবার সঙ্গে কথা বলেছি।
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় কোর্ট থেকে রীতিমত একটা আদেশ
দিয়ে আমার কথা বলার অধিকারকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমি যদি গণমাধ্যমে কিছু
বলতে চাইতাম, হয়তো গণমাধ্যমের ইচ্ছা ছিল ছাপানোর, গণমাধ্যম সেটি ছাপাতে পারতো না।
আমি একবার প্রেস ক্লাবে কথা বলেছিলাম। তখন পরের দিন দেখলাম যে প্রেস ক্লাবে একটি
তখনকার যেই প্রেস ক্লাবের যারা সদস্য ছিলেন বা কমিটি ছিল, তারা একটি মিটিং ডেকে
একটি সভা করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা তখন আমাকে আইনের দৃষ্টিতে ফেরারি বলা
হয়েছিল যে, সেরকম কোনো ব্যক্তিকে তারা প্রেস ক্লাবে কথা বলতে দেবে না। এভাবে তারা
চেষ্টা করেছিল আমার কথা বন্ধ করে রাখতে। আমি কথা বলেছি, সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন
পন্থায় আমি পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি, আমি ইনশাআল্লাহ পৌঁছেছি মানুষের কাছে। কাজেই
গণমাধ্যমে যে কথা বলিনি তা না। আমি কথা বলেছি হয়তো আপনারা তখন কথা নিতে পারেননি
অথবা শুনতে পারেননি। ইচ্ছা থাকলেও ছাপাতে পারেননি হয়তো প্রচার করতে পারেননি। কিন্তু
আমি বলেছি আমি থেমে থাকিনি।
বিবিসি বাংলা: বাংলাদেশে
গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেছে। অনেকের ধারণা ছিলো আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের
পর আপনি দেশে এসে স্বশরীরে দলের নেতৃত্ব দেবেন। আপনি এখনও দেশে ফেরেননি কেন?
তারেক রহমান: কিছু সঙ্গত
কারণে হয়তো ফেরাটা এখনও হয়ে উঠেনি এখনও। তবে সময় তো চলে এসেছে মনে হয়।
ইনশাআল্লাহ দ্রুতই ফিরে আসবো।
বিবিসি বাংলা: কবে নাগাদ
ফিরতে পারেন?
তারেক রহমান: দ্রুতই মনে
হয়। দ্রুতই ইনশাআল্লাহ।
বিবিসি বাংলা: নির্বাচনের
আগে আপনি দেশে থাকবেন কি না?
তারেক রহমান: রাজনীতি যখন
করি, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে স্বাভাবিক, নির্বাচনের সাথে রাজনৈতিক দল
রাজনৈতিক কর্মীর একটি ওতপ্রোত সম্পর্ক। কাজেই যেখানে একটি প্রত্যাশিত, জনগণের
প্রত্যাশিত নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের সময় কেমন করে দূরে থাকবো? আমি তো আমার
সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, ইচ্ছা থাকবে, আগ্রহ থাকবে- সেই প্রত্যাশিত, যে প্রত্যাশিত
নির্বাচন জনগণ চাইছে। সেই প্রত্যাশিত নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হবে, জনগণের সাথে
জনগণের মাঝেই থাকবো ইনশাআল্লাহ।
বিবিসি বাংলা: আপনি কি
নির্বাচনে অংশ নেবেন?
তারেক রহমান: জি,
ইনশাআল্লাহ।
বিবিসি বাংলা: একটা বিষয়
যেটা আপনার দল থেকে, মাঝে দলের নেতাদের কেউ কেউ কখনো কখনো বলেছেন যে একটা
নিরাপত্তার শঙ্কার কথা বলেছেন আপনি না আসার পেছনে, আপনি কি কোনও ধরনের শঙ্কা বোধ
করেছেন এর মধ্যে?
তারেক রহমান: বিভিন্ন রকম
শঙ্কার কথা তো আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তো শুনেছি। সরকারেরও বিভিন্ন
ব্যক্তির কাছ থেকেও তো অনেক সময় অনেক শঙ্কার কথা বিভিন্ন মাধ্যমে, বিভিন্ন
মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে।
বিবিসি বাংলা: মোটামুটি
সব পক্ষই স্বীকার করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আপনার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। বিএনপির কেউ
কেউ অভ্যুত্থানের একমাত্র মাস্টারমাইন্ড মনে করেন। আপনি কি নিজেকে এই আন্দোলনের
মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখেন?
তারেক রহমান: জুলাই
আন্দোলনে আমি কখনোই নিজেকে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখি না। এই যে পাঁচই আগস্ট যেই
আন্দোলন, জুলাই আন্দোলন বলে যেটি বিখ্যাত বা যেটি সকলের কাছে গৃহীত এই আন্দোলনটি
সফল হয়েছে জুলাই মাসে। কিন্তু এই আন্দোলনটি প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছে কিন্তু বহু
বছর আগে থেকে। এই আন্দোলনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা,
সেটি বিএনপি হোক বা অন্য রাজনৈতিক দলগুলো হোক, যারা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল,
প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছে। বিভিন্নভাবে তাদের নেতাকর্মীরা
নির্যাতিত হয়েছে। আমি মনে করি জুলাই-আগস্ট মাসে এসে জনগণ সকল গণতান্ত্রিক
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছে। শুধু কী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই সেদিন
ছিল মাঠে? অবশ্যই নয়। আমরা দেখেছি সেদিন মাদরাসার ছাত্ররা তারা ছিলেন এই আন্দোলনের
মাঠে। আমরা দেখেছি গৃহিনীরা পর্যন্ত রাস্তায় নেমে এসেছেন সন্তানের পেছনে। আমরা
দেখেছি কৃষক, শ্রমিক, সিএনজি চালক, ছোট দোকান কর্মচারী বা দোকান মালিক থেকে আরম্ভ
করে গার্মেন্টস কর্মী-তারা নেমে এসেছিলেন। আমরা দেখেছিলাম সামরিক বাহিনীর
অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীরা নেমে এসেছিলেন এই আন্দোলনে। এমন অনেক সাংবাদিক
যারা স্বৈরাচারের অত্যাচারে নির্যাতিত হয়ে দেশ থেকে বাইরে চলে যেতে বাধ্য
হয়েছিলেন, তারা সম্পৃক্ত হয়েছিলেন এই আন্দোলনে। কাজেই কারো ভূমিকাকে আমরা ছোট
করে দেখতে চাই, না খাটো করে দেখতে চাই না। সমাজের দল মত নির্বিশেষে শ্রেণিবিন্যাস
নির্বিশেষে প্রত্যেকটি মানুষের অবদান আছে। এই আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের জনগণের
আন্দোলন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড। কোনো দল কোনো
ব্যক্তি নয়, এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ

No comments