দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন' তকমার আড়ালের সত্য:বিএনপি ধাপে ধাপে দুর্নীতি কমিয়েছে

 বিশেষ প্রতিবেদন

তারিখ: ২ নভেম্বর, ২০২৫


উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া দুর্নীতির কলঙ্ক: চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিএনপি সরকারের পাঁচ বছর

২০০১ সালের ১লা অক্টোবর। দেশের জনগণ বিপুল রায় দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটকে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়। ১০ই অক্টোবর নতুন সরকার যখন শপথ গ্রহণ করে, তখন তাদের সামনে ছিল একরাশ সম্ভাবনা আর জনগণের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা। কিন্তু সেই প্রত্যাশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল এক গভীর ষড়যন্ত্রের ছায়া—আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার এক পরিকল্পিত আয়োজন।

ক্ষমতা গ্রহণের ১৫ দিনের মাথায় প্রথম আঘাত

বিএনপি সরকার দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ১৫ দিনের মাথায়, ১৫ই অক্টোবর ২০০১, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে দেখানো হয়। আকস্মিক এই প্রতিবেদন দেশের মানুষকে হতবাক করে দেয়। তবে গভীর বিশ্লেষণে বেরিয়ে আসে এর পেছনের বাস্তবতা।

এই প্রতিবেদনটি মূলত পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের (২০০০ সাল এবং ২০০১ সালের প্রথমার্ধ) তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। অর্থাৎ, যে দুর্নীতির দায়ভার নতুন সরকারের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, তার বীজ রোপিত হয়েছিল আগের সরকারের মেয়াদেই। বিএনপি সরকার কার্যত উত্তরাধিকার সূত্রে এই কলঙ্কের বোঝা কাঁধে নিতে বাধ্য হয়।

কলঙ্ক মোচনের পথে ধীর কিন্তু স্থির যাত্রা

আন্তর্জাতিকভাবে চাপিয়ে দেওয়া এই দুর্নাম মাথায় নিয়ে বিএনপি সরকার তাদের যাত্রা শুরু করে। তাদের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল পূর্ববর্তী সরকারের রেখে যাওয়া দুর্নীতির গভীর ক্ষত সারিয়ে তোলা এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা। এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদের নেওয়া পদক্ষেপের ইতিবাচক প্রতিফলন দেখা যায় টিআই-এর পরবর্তী রিপোর্টগুলোর স্কোর বিশ্লেষণে।

আসুন, স্কোরগুলোর দিকে নজর দেওয়া যাক (উল্লেখ্য, টিআই-এর তৎকালীন ০-১০ স্কেলে স্কোর যত বেশি, দুর্নীতি তত কম বলে বিবেচিত হতো):

দুর্নীতির ধারণা সূচক (ঈচও) তুলনামূলক চিত্র: ২০০১-২০০৫

সাল শাসনামল (তথ্যভিত্তিক) দুর্নীতির ধারণা সূচক (ঈচও) স্কোর<নৎ>(০-১০ স্কেলে, স্কোর যত বেশি তত ভালো) বিশ্বে অবস্থান স্কোরের পরিবর্তন ও মন্তব্য

২০০১ আওয়ামী লীগ সরকার     ০.৪ (সর্বনিম্ন) শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত বিএনপি সরকার এই

                                                                                               কলঙ্কময় স্কোরটি উত্তরাধিকার সূত্রে পায়।

২০০২ বিএনপি সরকার         ১.২ শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত প্রথম বছরেই স্কোরের তিনগুণ উন্নতি।

২০০৩ বিএনপি সরকার         ১.৩ শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত উন্নতির ধারা অব্যাহত।

২০০৪ বিএনপি সরকার         ১.৫ শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত স্কোরের ধারাবাহিক অগ্রগতি।

২০০৫ বিএনপি সরকার         ১.৭ শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত পাঁচ বছরে স্কোরের উল্লেখযোগ্য এবং

 ইতিবাচক পরিবর্তন।

২০০১ সাল: আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া তথ্য অনুযায়ী স্কোর ছিল সর্বনিম্ন, মাত্র ০.৪।

২০০২ সাল: বিএনপি সরকারের প্রথম বছরেই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। স্কোর তিনগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ১.২।

২০০৩ সাল: উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকে এবং স্কোর আরও বেড়ে হয় ১.৩।

২০০৪ সাল: স্কোর বৃদ্ধি পেয়ে ১.৫-এ উন্নীত হয়।

২০০৫ সাল: বিএনপি সরকারের শেষ বছরে স্কোর বেড়ে দাঁড়ায় ১.৭।

পরিসংখ্যান স্পষ্টভাবে দেখায় যে, বিএনপি সরকারের পাঁচ বছরে দুর্নীতির ধারণা সূচকে স্কোর ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পরিস্থিতির ধীরগতির কিন্তু ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া "বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ"-এর কলঙ্ক রাতারাতি মুছে ফেলা সম্ভব না হলেও, বিএনপি সরকার যে সঠিক পথেই হাঁটছিল, এই স্কোরগুলোই তার প্রমাণ।

প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ: দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন

দুর্নীতি দমনে শুধু কথার কথা নয়, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও মনোযোগ দেয় তৎকালীন সরকার। ব্যাপক সমালোচনার মুখে থাকা দুর্নীতি দমন ব্যুরোকে বিলুপ্ত করে ২০০৪ সালে একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন পাস করা হয়, যা ছিল দুর্নীতিবিরোধী সংগ্রামে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

উপসংহার

আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া দুর্নীতির ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে বিএনপি সরকারকে তাদের পথচলা শুরু করতে হয়েছিল। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই একটি নেতিবাচক প্রতিবেদনের মাধ্যমে তাদের কাজকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হলেও, তারা সেই চ্যালেঞ্জ সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করে। পাঁচ বছরে স্কোরের ধারাবাহিক উন্নতি এবং দুদক গঠনের মতো বলিষ্ঠ পদক্ষেপ এটাই প্রমাণ করে যে, বিএনপি সরকার দুর্নীতির কলঙ্ক মোচনে আন্তরিক ছিল এবং তাদের গৃহীত নীতির ফলশ্রুতিতে দেশ ধীরে ধীরে অন্ধকারের অতল গহ্বর থেকে আলোর পথে ফিরতে শুরু করেছিল।

No comments

Powered by Blogger.