এক দেশ, এক ভোট: সাশ্রয়ের সোনালী দিগন্তে বাংলাদেশ, বাঁচবে হাজারো কোটি টাকা
বিশেষ প্রতিবেদন
২ নভেম্বর, ২০২৫: বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে এক নতুন ভোরের সূচনা হতে চলেছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাহেন্দ্রক্ষণে স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং জুলাই সনদের ওপর গণভোটকে একীভূত করার যে যুগান্তকারী রূপরেখা প্রণীত হয়েছে, তা কেবল একটি প্রস্তাবনা নয়, বরং এটি একটি স্মার্ট, সাশ্রয়ী ও গতিশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এই সমন্বিত নির্বাচনী মহাযজ্ঞ সফলভাবে আয়োজন করা সম্ভব হলে রাষ্ট্রের কোষাগারে সাশ্রয় হবে হাজার হাজার কোটি টাকা, যা দেশের অগ্রযাত্রায় নতুন গতি সঞ্চার করবে।
যেভাবে ভাঙবে খরচের চক্র
প্রচলিত ধারায়, প্রতিটি নির্বাচন এক একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। জাতীয় নির্বাচন, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন—প্রতিটির জন্য আলাদাভাবে আয়োজন করতে হয় বিশাল প্রস্তুতি। এতে বারবার পুনরাবৃত্তি হয় ভোটকেন্দ্র স্থাপন, লক্ষ লক্ষ নির্বাচনী কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ এবং কোটি কোটি ব্যালট পেপার ছাপানোর মতো ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। এটি কেবল রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়ই নয়, বরং প্রশাসনিক ব্যবস্থার ওপর এক বিরাট চাপও বটে।
একসঙ্গে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের মাধ্যমে এই বহুমুখী নির্বাচনী স্রোতকে একটি একক, সুশৃঙ্খল মোহনায় মিলিত করার প্রস্তাবনা করা হয়েছে। এর সুফলগুলো সুদূরপ্রসারী:
স্বপ্নের সাশ্রয়, সমৃদ্ধির পথে বিনিয়োগ: সবচেয়ে বড় অর্জন হবে আর্থিক সাশ্রয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই একীভূত ব্যবস্থাপনার ফলে রাষ্ট্রের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ বেঁচে যাবে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে দেশের শিক্ষাখাতে নতুন স্কুল নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবায় আধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্ভব, যা সরাসরি জনগণের জীবনমানকে উন্নত করবে।
জনগণের স্বস্তি, গণতন্ত্রের উৎসবে রূপান্তর: ঘন ঘন নির্বাচনের কারণে সৃষ্ট নির্বাচনী ক্লান্তি থেকে মুক্তি পাবে দেশের সাধারণ মানুষ। কর্মব্যস্ত জীবনে বারবার ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার ভোগান্তি দূর হবে। একটি দিনেই নাগরিকরা তাদের পছন্দের জাতীয় ও স্থানীয় প্রতিনিধি নির্বাচন এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত দেওয়ার সুযোগ পাবেন। এটি নিছক ভোটদান নয়, বরং একটি দিনেই গণতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ উৎসবে পরিণত হবে, যা ভোটারদের অংশগ্রহণকে আরও উৎসাহিত করবে।
গতিশীল প্রশাসন, নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়ন: এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রশাসনিক যন্ত্র বারবার নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত না থেকে জনসেবা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিরবচ্ছিন্নভাবে মনোযোগ দিতে পারবে। এটি দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সময়োচিত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে এবং প্রশাসনিক দক্ষতাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
একটি সাহসী পদক্ষেপের প্রতীক্ষায় জাতি
রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে, রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। এটি কেবল একটি নির্বাচনী সংস্কার নয়, বরং এটি একটি দক্ষ, আধুনিক ও জনবান্ধব রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার পথে এক বলিষ্ঠ অভিযাত্রা। এই সোনালী সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে আর্থিক সাশ্রয় ও সুশাসনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

No comments