রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা: তাহাজ্জুত নামাজ পড়ে কুরআন হাতে শপথ নিলেন কাদের মির্জা

সত্য কথা বলব, ভাইয়ের বিরুদ্ধে গেলেও ভয় পাই না" - ফেসবুক লাইভে এসে নোয়াখালীর অপরাজনীতির বিরুদ্ধে আমৃত্যু লড়াইয়ের ঘোষণা দিলেন বসুরহাটের মেয়র।

নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক বার্তা বিশ্বময়

৩ নভেম্বর, ২০২৫

দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ও চাঞ্চল্যকর ঘটনার জন্ম দিয়ে তাহাজ্জুত নামাজ আদায় শেষে পবিত্র কুরআন শরিফ হাতে নিয়ে শপথ গ্রহণ করেছেন নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জার এই অভিনব প্রতিবাদ ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত হলে দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে নিজের কার্যালয় থেকে ফেসবুক লাইভে আসেন মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। লাইভের শুরুতে তিনি দুই রাকাত তাহাজ্জুত নামাজ আদায় করেন। এরপর আবেগঘন কণ্ঠে পবিত্র কুরআন শরিফ হাতে নিয়ে আল্লাহর নামে শপথ করে বলেন, তিনি আজীবন সত্য কথা বলে যাবেন এবং কোনো অন্যায়, দুর্নীতি বা অপরাজনীতির কাছে মাথা নত করবেন না।

শপথনামায় যা বললেন কাদের মির্জা:

ফেসবুক লাইভে নেওয়া তার এই শপথে ছিল বেশ কয়েকটি দৃঢ় অঙ্গীকার। তিনি বলেন:

সত্যের পক্ষে অবিচল: "যতদিন আমি বেঁচে থাকব, আমি সত্য কথা বলে যাব। কোনো মিথ্যার সঙ্গে আমি আপোষ করব না।"

অন্যায়-দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ: তিনি নোয়াখালীর স্থানীয় পর্যায়ে চলমান টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি এবং অপরাজনীতির বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।

চাপের মুখে নত না হওয়া: তিনি বলেন, "কোনো চাপ, ভয়ভীতি বা প্রলোভন আমাকে আমার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না।"

পরিবারের ঊর্ধ্বে ন্যায়বিচার: সবচেয়ে বিস্ফোরক মন্তব্যে তিনি বলেন, "আমার ভাই (ওবায়দুল কাদের), আমার আত্মীয়-স্বজন বা আমার দলের নেতা, যে-ই অন্যায়কারী হোক না কেন, আমি তার বিরুদ্ধে কথা বলতে বিন্দুমাত্র ভয় পাব না।"

ঘটনার প্রেক্ষাপট:

মূলত ২০২০ সালের শেষভাগ থেকে মেয়র আবদুল কাদের মির্জা "সত্য বচন" নামে তার বিস্ফোরক বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন। তিনি নোয়াখালীর স্থানীয় রাজনীতিসহ জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন নেতার কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা শুরু করেন। তার এই ধারাবাহিক বক্তব্যের চরম পর্যায় ছিল তাহাজ্জুত নামাজ পড়ে শপথ গ্রহণের এই ঘটনা। নিজের বক্তব্যের প্রতি মানুষের আস্থা অর্জন এবং তার অবস্থান যে কতটা দৃঢ়, তা বোঝাতেই তিনি এই ব্যতিক্রমী পথ বেছে নেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব:

কাদের মির্জার এই ফেসবুক লাইভ মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় এবং জাতীয় গণমাধ্যমের প্রধান খবরে পরিণত হয়। এই ঘটনা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে তীব্র অস্বস্তি তৈরি করে। এর জের ধরে নোয়াখালীর স্থানীয় রাজনীতিতে সহিংসতা ও বিভেদ চরমে ওঠে, যা একাধিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জন্ম দেয়। একজন রাজনীতিবিদের এমন धार्मिक অনুষঙ্গ ব্যবহার করে শপথ নেওয়ার ঘটনাটি দেশের মানুষের কাছে প্রশংসা ও সমালোচনা—উভয়ই কুড়িয়েছে। তবে এটি যে আবদুল কাদের মির্জাকে একজন আপোষহীন ও ব্যতিক্রমী চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

No comments

Powered by Blogger.