ছাত্রীকে ধর্ষণ করলেন মাদরাসা শিক্ষক, ভিডিও করলেন শিক্ষিকা: অপমানে ছাত্রীর আত্মহত্যা, গ্রেপ্তার ২
নিজস্ব প্রতিনিধি:
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে এক মাদরাসাছাত্রীকে (১৪) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানেরই এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। আরও ভয়াবহ অভিযোগ হলো, ওই ধর্ষণের সময় মাদরাসার এক নারী শিক্ষিকা মুঠোফোনে সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করেন এবং ধর্ষণে সহায়তা করেন। এই ঘটনার পর লোকলজ্জা ও অপমানে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষিকাকে গ্রেপ্তার করেছে।
গত বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) মুকসুদপুর উপজেলার বামনডাঙ্গা আয়েশা সিদ্দিকা মহিলা হাফেজিয়া মাদরাসায় এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত:
নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বামনডাঙ্গা আয়েশা সিদ্দিকা মহিলা হাফেজিয়া মাদরাসার প্রধান শিক্ষক হাফেজ মো. মাহমুদুল হাসান শিকদার (৫১) বেশ কিছুদিন ধরে ওই ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সুযোগ বুঝে শিক্ষক মাহমুদুল হাসান ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। এ সময় মাদরাসার সহকারী শিক্ষিকা খাদিজা বেগম (৩০) ধর্ষণে বাধা না দিয়ে উল্টো সেই দৃশ্য নিজের মোবাইল ফোনে ভিডিও করেন।
অভিযোগ রয়েছে, ঘটনার পর ওই শিক্ষিকা ভিডিওটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখান এবং বিষয়টি গোপন রাখতে চাপ দেন। এই অপমান ও মানসিক যন্ত্রণা সইতে না পেরে ওই ছাত্রী বৃহস্পতিবার বিকেলেই নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
অভিযুক্তদের পরিচয়:
১. হাফেজ মো. মাহমুদুল হাসান শিকদার (৫১): তিনি মাদরাসাটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক। তার বাড়ি নড়াইল জেলায়।
২. খাদিজা বেগম (৩০): তিনি ওই মাদরাসার সহকারী শিক্ষিকা এবং বামনডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা।
গ্রেপ্তার ও এলাকাবাসীর ক্ষোভ:
ছাত্রীর আত্মহত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা মাদরাসা ঘেরাও করে প্রধান শিক্ষক মাহমুদুল হাসানকে আটক করে গণধোলাই দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে হেফাজতে নেয়। একইসাথে এই অপকর্মে সহায়তাকারী শিক্ষিকা খাদিজা বেগমকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের বক্তব্য ও মামলা:
মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিহতের মা বাদী হয়ে থানায় ধর্ষণ এবং আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য ছাত্রীর মরদেহ গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে এবং স্থানীয়রা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
.png)

No comments